বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
মো. সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া,বরিশাল থেকে: জীবন মানেই যন্ত্রনা বেঁচে থাকতে বোধ হয় শেষ হবেনা। সুরেলা কন্ঠে এমনই গান গেয়ে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়েচলা ভয়াল সন্দ্যা নদীতে ভাসমান জেলেদের কাছে চা-বিস্কুট বিক্রি করেন জন্ম থেকে বিকালঙ্গ মো. নবুয়ত।
উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের তালাপ্রসাদ গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে নবুয়ত জন্ম থেকেই সম্পূর্ণ শারিরীকগত ভাবে বিকালঙ্গ। তার দুটি পা ও হাত দিয়ে ভারিকোন কাজ করতে পারেন না তিনি। ফলে কোন কাজেই সে অংশ গ্রহন করতে পারেন না,বা কেউ তাকে কাজে নেয় না।
এই যখন নবুয়তের অবস্থা তখন তার মাথার ওপরে যেন আকাশ চেপে বসে আছে। কি করবেন কার কাছে যাবেন,নাকি মানুষের ধারে ধারে হাত পেতে ভিক্ষাবৃত্তি করবেন এ চিন্তায় যেন জীবন চলারপথ অন্ধকার হয়ে আসছিলো নবুয়তের। অনেক ভেবে চিন্তে নবুয়ত ঠিক করলেন ভিক্ষা করবেন না, তার কুঁড়েঘর লাগোয়া সন্ধ্যা নদীতে ভাসমান জেলেদের চা-বিস্কুট ও বিশুদ্ধ পানি পান করাবেন। এ কাজ করে যে টাকা পাওয়া যাবে সেই অর্থ দিয়েই এগিয়ে নিয়ে যাবেন তার সংসার।
ভাবনামতো কাজও করলেন নবুয়ত ছোট্ট একটি ডিঙ্গি নৌকায় করে মাত্র দু’থেকে তিনটি বক্সে বিস্কুট ও ফ্লাক্সে করে চা নিয়ে বিকালঙ্গ হাতে কোনমতে বৈঠা বেয়ে বেয়ে জেলেদের এ নৌকা থেকে অন্য নৌকার কাছে চলে যান অসহায় নবুয়ত।
তবে অনেক সময় নদীতে চলার পথে বাধ সাজেন ভয়াল সন্ধ্যার ¯্রােত। স্্েরাত বেশি হলে নবুয়তের নৌকার বৈঠা চালাতে অনেক কষ্ঠ হয়। কেননা তার দুটি হাতই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক সরু। তাই ¯্রােতের বিপরিতে যেতে যে শক্তির প্রয়োজন তিনি বৈঠার মাধ্যমে তা প্রয়োগ করতে পারেন না।
স্থানীয়রা জানান তার নৌকায় সর্বসাকুল্যে ২ শত টাকার মালামাল থাকতে পারে। সকাল ও বিকেল এ দু’বেলা চা-বিস্কুট বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জণ করেণ তার একটি ভাগ থেকেই মা,২ ছেলে,১মেয়ে.স্ত্রী ও তিনি সহ ৬ জনের সংসার চালান নবুয়ত। অর্থের অভাবে সন্তানদের তেমন ভালো করে লেখাপড়াও শেখাতে পারছেন না তিনি। তাইতো দিনের শেষে যখন বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নেন অসহায় বিকালঙ্গ নবুয়ত তখন তার মনের অজান্তেই গেয়ে ওঠেন “মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে,আমি আর বাইতে পারছিনা।
Leave a Reply